নিজস্ব প্রতিবেদক : এক যুগের বেশি সময় পরে আয়োজিত সমাবর্তনকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে তোড়জোড় করে শেষ সময়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দিতে ক্যাম্পাসকে নতুন মোড়কে সাজানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাস্তা মেরামত করাসহ গোলচত্বরের পুনঃ নির্মাণ করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৮ জানুয়ারি তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, নানান ডিজাইনের গেটসহ সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞাতার্থে বিভিন্ন তথ্য সংবলিত নির্দেশিকা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী বুধবার (৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় সমাবর্তনের অনুষ্ঠান সূচি ও বিভিন্ন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে একাডেমিক ভবন ‘ডি’ এ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৩য় সমাবর্তনের প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফসয়ল আহমেদ লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচি ও নির্দেশিকাসমূহ প্রকাশ করেন।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ফয়সল আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে পূর্ণ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে সমাবর্তন স্থলসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের সময় সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দদেরকে বিকেল আড়াইটার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করতে হবে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পরবর্তীতে বিকেল ৩টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের আগমনের পর জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে এবং সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সমাবর্তন বক্তা কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং এরপর সভাপতির ভাষণ প্রদান করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। বিকেল ৪টায় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
সমাবর্তনে অবশ্যই নির্ধারিত আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে আনতে হবে। মোবাইল ফোন, হাত ব্যাগ, ব্রিফকেস, ছাতা ও পানির বোতল, ক্যামেরা বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না। সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন অতিথি নিয়ে আসতে পারবেন। তবে অতিথিদেরকে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে একাডেমিক ভবন ‘ই’ ও ‘আইআইসিটি’ ভবনে অবস্থান করতে হবে।
এছাড়া সমাবর্তনের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং কনস্টিট্যুয়েন্ট কলেজের অধ্যক্ষ/ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দদেরকে বুধবার বিকেল ২টা ২০মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন-২ প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকতে হবে।
রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ কর্তৃক মূল সনদপত্র গ্রহণের সময় সাময়িক সনদপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। সমাবর্তনের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং পরের দিন ৯ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত কাউন্টার থেকে মূল সনদপত্র বিতরণ করা হবে। তৎপরবর্তীতে অফিস চলাকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করা যাবে।
তিনি আরও জানান, ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও আইআইসিটি ভবনের ক্যাফেটেরিয়া সমাবর্তনের দিন খোলা থাকবে। সমাবর্তনের দিন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার খোলা থাকবে এবং অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ প্রয়োজনে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন। ‘তৃতীয় সমাবর্তন ২০২০’ স্টিকারযুক্ত গাড়িগুলোই শুধু পার্কিং সুবিধা পাবে। পার্কিং স্থলগুলো সাইনবোর্ড দ্বারা নির্দিষ্ট থাকবে। শাবিপ্রবি’র সম্মানিত শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দকে তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ী ক্যাম্পাসে আনতে পারবেন না। বিস্তারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (ংঁংঃপড়হাড়পধঃরড়হ.পড়স) থেকে জানা যাবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের ভিআইপি ব্যক্তিত্ব সে হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের মতো করে নিরাপত্তার ব্যাপারটা দেখভাল করছে।
এদিকে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।
এ নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দিতে বেশ আগে থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি সময়ের মাঝে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৬ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে স্নাতকোত্তর ১ হাজার ১২৭ জন, স্নাতক ৪ হাজার, পিএইচডি ২ জন, এমবিবিএস ৮৭৮ জন, এমএস ও এমডি ডিগ্রিধারী ৬ জন এবং নার্সিংয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এ সমাবর্তনে ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ১০ জন স্নাতকোত্তরে ৫ জন ও ২য় সমাবর্তনে বাকি থাকা ৫ স্বর্ণপদকসহ মোট ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে।
এছাড়া সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ও অধিভুক্ত কলেজসমূহের ৮৯ জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাবর্তনের আয়োজন সফল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা ১৭টি উপকমিটি গঠন করেছি । প্রতিটি কমিটি সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দিনভর কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি একটি সফল সমাবর্তন উপহার দিতে পারবো শিক্ষার্থীদের।
সমাবর্তনের বক্তা বিশিষ্ট লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন। আগামী ৭ জানুয়ারি বেলা আড়াইটায় সমাবর্তনের মহড়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান উপাচার্য।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ ২৮ বছরে মাত্র দু’টি সমাবর্তন পেয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল বিশবিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন এবং এর ৯ বছর পর ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।